উখিয়ার পালংখালীতে পৈতৃক সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিরোধ হলেই মাকে জুতা দিয়ে জখম
মোহাম্মদ রাশেদ:
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নে পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ চরমে পৌঁছায় যখন বিলকিছ বেগম নামে এক নারী তার বৃদ্ধা মাকে প্রকাশ্যে জুতা দিয়ে মারধর করেন। ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে এবং নিন্দার ঝড় উঠেছে।
জানা যায়, গত ২২ ও ২৩ মার্চ ২০২৫ ইং তারিখে পালংখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের সংলগ্ন এলাকায় দফায় দফায় এ ঘটনা ঘটে। পারিবারিক সম্পত্তির ভাগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বিরোধের জেরে এ সংঘর্ষ হয়। বিলকিস বেগম ছয় ভাইয়ের দুই বোনের মধ্যে বড়। তাদের পিতা মৃত্যুবরণ করার পর বসতভিটার মালিকানার ভাগ নিয়ে পরিবারের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়।
বিলকিছের ভাই মোহাম্মদ তোফায়েল আর্থিক সংকট মোকাবিলা করতে দুই মাস আগে প্রবাসে চলে যান। এই সুযোগে বিলকিস বেগম, তার ১৬ বছর বয়সী মেয়ে সোমাইয়া আক্তার ও ২৮ বছর বয়সী ছেলে ইকবালকে নিয়ে পৈতৃক বসতভিটা দখলের চেষ্টা চালান।
এ সময় তোফায়েলের স্ত্রী মুবিনা আক্তার বাধা দিলে বিলকিছ ও তার দুই সন্তান মিলে তাকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করেন এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মকভাবে জখম করেন। মুবিনা আক্তারের চিৎকার শুনে পরিবারের অন্য সদস্যরা ও স্থানীয়রা ছুটে আসেন।
সংঘর্ষের সময় বিলকিছের মা দেলোয়ারা বেগম চিৎকার করে উঠলে, বিলকিছ আক্তার প্রকাশ বাল্টিনি ক্ষিপ্ত হয়ে নিজের পায়ের জুতা খুলে বৃদ্ধা মাকে মাথায় ও কপালে আঘাত করেন। এতে দিলুআরা বেগম গুরুতর আহত হন।
পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন বিলকিছের ছেলে ইকবাল তোফায়েলের স্ত্রী মুবিনা আক্তারকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিতে থাকেন। এতে পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়রা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা বলেন, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। সেই মা-কে কেউ যদি নির্যাতন করে, তাহলে তার শাস্তি দৃষ্টান্তমূলক হওয়া উচিত।
এলাকাবাসী দ্রুত বিলকিছ বেগম ও তার সন্তানদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ঘটনাটি জানার পর শালিসি বৈঠকের আশ্বাস দিয়েছেন, তবে এখনো কোনো সমাধান হয়নি।
গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে বৃদ্ধা দিলুআরা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি আমার নিজের মেয়ের হাতে এমন নির্যাতনের শিকার হবো, কখনো ভাবিনি। আমি বিচার চাই, যেন আমার মতো আর কোনো মা মেয়ের হাতে লাঞ্ছিত না হয়।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে আলোচনা চলছে। অনেকে মনে করছেন, দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় না আনা হলে এ ধরনের পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা আরও বাড়বে।
স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ যদি দ্রুত হস্তক্ষেপ না করে, তাহলে পরিবারটির নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।